কম্পিউটার পেরিফেরালস এবং ইন্টারফেসিং কী?

পেরিফেরালস এবং ইন্টারফেসিং কম্পিউটারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ন একটি বিষয়। আজকের টপিকে আমি কম্পিউটার পেরিফেরালস এবং ইন্টারফেসিং বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব। তো চলুন মূল টপিকে যাওয়া যাক।
কম্পিউটার পেরিফেরালস এবং ইন্টারফেসিং কী?

{tocify} $title={Table of Contents}

কম্পিউটার পেরিফেরালসঃ

পেরিফেরাল শব্দের আভিধানিক অর্থ হল সীমান্তবর্তী বা প্রান্তিক। কম্পিউটারের মাইক্রোপ্রসেসর এককভাবে কোন কাজ সম্পাদন করতে পারে না। তাই পেরিফেরালস ডিভাইসসমূহ কম্পিউটারের সিপিইউ’র সীমান্তবর্তী বা প্রান্তিক স্থানে অবস্থান করে নিজেদের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান এবং সংরক্ষণ করে থাকে।

কম্পিউটার পেরিফেরালস কি?

কম্পিউটারের সিপিইউ'র সাথে লজিক্যালি বা ফিজিক্যালি সংযুক্ত যাবতীয় ইনপুট, আউটপুট, ও স্টোরেজ ডিভাইসকে কম্পিউটার পেরিফেরালস বলে। অর্থাৎ, যেসকল ডিভাইস কম্পিউটারের সিপিইউ'র সাথে সংযুক্ত হয়ে কম্পিউটারের সাথে তথ্য আদান প্রদান করে সেসকল ডিভাইসকে পেরিফেরালস ডিভাইস বলা হয়। কম্পিউটার পেরিফেরালস সমূহ পেরিফেরালস, ইনপুট-আউটপুট ডিভাইস বা আই/ও (I/O) ডিভাইস নামেও পরিচিত।

কম্পিউটার পেরিফেরালস কত প্রকার?

কম্পিউটার পেরিফেরালস এর প্রকারভেদ

কম্পিউটার পেরিফেরালস কে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ
  1. ইনপুট পেরিফেরালস।
  2. আউটপুট পেরিফেরালস।
  3. স্টোরেজ বা মেমোরি পেরিফেরালস।

ইনপুট পেরিফেরালসঃ
ইনপুট পেরিফেরালস
যেসকল পেরিফেরালস ডিভাইসের মাধ্যমে কম্পিউটারে ডাটা, দিকনির্দেশনা বা ইনপুট প্রদান করা হয়, সেসকল পেরিফেরালস ডিভাইসকে ইনপুট পেরিফেরালস বলে। কতগুলো ইনপুট পেরিফেরালস এর নামঃ কী-বোর্ড, কম্পিউটার মাউস, টার্চ স্কিন, মাইক্রোফোন, ক্যামেরা, জয়স্টিক, স্ক্যানার, ওএমআর ইত্যাদি। নিচে কতগুলো কমন ইনপুট পেরিফেরালস নিয়ে আলোচনা করা হলো।
  • কী-বোর্ডঃ কী-বোর্ড হলো এমন একটি ডিভাইস যেখানে কতগুলো কী বা বোতাম বিন্যস্ত আকারে থাকে। কী-বোর্ড একটি ইনপুট পেরিফেরালস বা ইনপুট ডিভাইস। কী-বোর্ডের প্রতিটি কী’র জন্য নির্দিষ্ট কী কোড বা ভ্যালু থাকে। কম্পিউটারে কোন লিখা ইনপুট দেওয়ার জন্য কী-বোর্ড হলো প্রধান ডিভাইস। কী-বোর্ড টাইপ রাইটারের মতো একটি ডিভাইস যেখানে কী গুলো মেট্রিক্স আকারে সাজানো থাকে।
  • মাউসঃ কম্পিউটার মাউস হচ্ছে এক ধরনের পয়েন্টার ডিভাইস। মাউস সাধারণত কম্পিউটারের গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেসের কার্সর এর মুভমেন্ট কে নিয়ন্ত্রণ করে। মাউস একটি ইনপুট পেরিফেরালস বা ইনপুট ডিভাইস।
  • মাইক্রোফোনঃ কম্পিউটারে বয়েস কিংবা সাউন্ড ইনপুট দেওয়ার জন্য মাইক্রোফোন হচ্ছে অন্যতম প্রধান একটি ডিভাইস। মাইক্রোফোন মিক (mic) বা মাইক নামেও পরিচিত। মাইক্রোফোন সাধারণত কোন সাউন্ড এর এনালগ সিগনাল কে ইলেকট্রনিক সিগনালে রূপান্তর করে কম্পিউটারে প্রেরন করে।

আউটপুট পেরিফেরালসঃ
আউটপুট পেরিফেরালস
যে সকল পেরিফেরালস ডিভাইস সমূহ কম্পিউটারে প্রদানকৃত কোন ডাটার প্রক্রিয়াজাত ফলাফল প্রদর্শন করতে ব্যবহৃত হয় সেসকল ডিভাইসকে আউটপুট পেরিফেরালস ডিভাইস বলা হয়। অর্থাৎ, আউটপুট প্রদর্শনের জন্য যেসকল ডিভাইস ব্যবহার করা হয় সেগুলোই হলো আউটপুট পেরিফেরালস। কতগুলো আউটপুট পেরিফেরালস এর নামঃ মনিটর, প্রজেক্টর, প্রিন্টার, প্লটার, ইত্যাদি।
  • মনিটরঃ মনিটর হলো কম্পিউটারের প্রধান আউটপুট পেরিফেরাল বা আউটপুট ডিভাইস। মনিটরে কম্পিউটারের সকল কার্যক্রম প্রদর্শিত হয়। মনিটর প্রধানত তিন ধরনের। যথাঃ
    ১. ক্যাথোড রে টিউব বা সিআরটি।
    ২. লিকুইড ক্রিস্টাল ডিসপ্লে বা এলসিডি।
    ৩. লাইট ইমিটিং ডায়োড বা এলইডি।
  • প্রিন্টারঃ প্রিন্টার এমন একটি ডিভাইস যার সাহায্যে মানুষের বোধগম্য ছবি, গ্রাফ, লেখা কাগজে ছাপানো যায়। প্রিন্টার একটি আউটপুট ডিভাইস আউটপুট পেরিফেরাল। প্রিন্টারের ক্ষেত্রে আউটপুট সাধারণত কাগজে দেখতে পাওয়া যায়।

স্টোরেজ বা মেমোরি পেরিফেরালসঃ
যে সকল পেরিফেরালস ডিভাইস সমূহ বিভিন্ন প্রকার ডাটা সংরক্ষণ করে রাখতে পারে সে সকল ডিভাইসকে স্টোরেজ বা মেমোরি পেরিফেরাল ডিভাইস বলা হয়। যেমনঃ মেমোরি কার্ড, পেনড্রাইভ, হার্ডডিস্ক, সিডি-ডিভিডি ইত্যাদি।
  • মেমোরি কার্ডঃ মেমোরি কার্ড হল এমন একটি ডিভাইস যার মধ্যে ডিজিটাল ডাটা সংরক্ষণ করা যায়। এটি খুব পোর্টেবল হওয়ায় বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস যেমনঃ ডিজিটাল ক্যামেরা, মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, ট্যাবলেট, পিডিএ, পোর্টেবল মিডিয়া প্লেয়ার, ভিডিও গেম কনসোল ইত্যাদিতে খুব সহজ ব্যবহার করা যায়। কম্পিউটারে মেমোরি কার্ড ব্যবহার করার জন্য এক্সটার্নাল কার্ড রিডার ব্যবহার করতে হয়।
  • পেনড্রাইভঃ পেনড্রাইভও অনেকটা মেমোরি কার্ডের মতোই। এতেও ডিজিটাল ডাটা সংরক্ষণ করা যায়। বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস্ ডিভাইসে পেনড্রাইভ ব্যবহার করার জন্য ইউএসবি পোর্ট ব্যবহার করা হয়।
এসব ডিভাইস ছাড়াও কম্পিউটারের আরো অনেক ধরনের অ্যানালগ এবং ডিজিটাল পেরিফেরালস ডিভাইস রয়েছে।

ইন্টারফেসিং কিঃ

ইন্টারফেসিং হচ্ছে মাইক্রোপ্রসেসর ও পেরিফেরালস ডিভাইস সমূহের মধ্যে একটি কানেকশন যার মাধ্যমে মাইক্রোপ্রসেসর ও পেরিফেরালস ডিভাইস সমূহ একে অপরের সাথে সংযুক্ত হয়ে তথ্য বা ডাটা আদান-প্রদান করতে পারে। শুধু পেরিফেরালস ডিভাইস সমূহ ও মাইক্রোপ্রসেসর এর মধ্যে সম্পর্ককে ইন্টারফেসিং বলতে হবে এমন কোন কথা নেই। কোন অ্যানালগ কিংবা ডিজিটাল ডিভাইসের সাথে অন্য কোনো অ্যানালগ কিংবা ডিজিটাল ডিভাইসের সম্পর্ককেই ইন্টারফেসিং বলা যায়। ইন্টারফেসিং এর মাধ্যমে একাদিক ডিভাইসের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য একটি নির্দিষ্ট ডিভাইসের প্রয়োজন হয়। উক্ত ডিভাইসকে ইন্টারফেসিং ইউনিট বলা হয়।
একটি উদাহরণের মাধ্যমে ইন্টারফেসিং ইউনিট বিষয়টি খুব সহজেই বুঝতে পারবেন। মনে করুন, আপনি কাউকে চিঠি পাঠানোর মাধ্যমে কোন একটি তথ্য আদান-প্রদান করবেন। তো, চিঠি পাঠাতে হলে অবশ্যই ডাক-পিয়নের মাধ্যমেই চিঠিটি পাঠাতে হবে। এখানে, ডাক-পিয়ন মূলত আপনি, এবং আপনি যার কাছে চিঠি পাঠাবেন তার সাথে একটি সম্পর্ক তৈরি করে দিচ্ছে। ঠিক একইভাবে ইন্টারফেসিং এর সময় ইন্টারফেসিং ইউনিট একাধিক ডিভাইসের মধ্যে একটি সম্পর্ক তৈরি করে দেয়।

ইন্টারফেসিং এর প্রকারভেদঃ

ইন্টারফেসিং এর প্রকারভেদ

ডিভাইসের ধরন অনুযায়ী ইন্টারফেসিং দুই প্রকারের হয়ে থাকে। যথাঃ
  1. ডিজিটাল ইন্টারফেসিং।
  2. এনালগ ইন্টারফেসিং।

ডিজিটাল ইন্টারফেসিংঃ
ডিজিটাল ইন্টারফেসিং
প্রসেসর ও ডিজিটাল ডিভাইসের সাথে পারস্পরিক সম্পর্ককে ডিজিটাল ইন্টারফেসিং বলা হয়। যেমনঃ মাইক্রোপ্রসেসর এবং কী-বোর্ডের ইন্টারফেসিং। ডিজিটাল ইন্টারফেসিং এর ক্ষেত্রে ইন্টারফেসিং ইউনিট হিসেবে বিভিন্ন ধরনের পোর্ট ব্যবহৃত হয়।

এনালগ ইন্টারফেসিংঃ
এনালগ ইন্টারফেসিং
মাইক্রোপ্রসেসর বা এমন ডিভাইস যাদের প্রকৃতি ডিজিটাল সিগন্যালের ও এনালগ ডিভাইসের সাথে পারস্পারিক সম্পর্ককে এনালগ ইন্টারফেসিং বলা হয়। যেমনঃ মাইক্রোকম্পিউটারের সাথে মেডিকেল ইন্সট্রুমেন্টের ইন্টারফেসিং। এনালগ ইন্টারফেসিং এর ক্ষেত্রে ইন্টারফেসিং ইউনিট হিসেবে বিভিন্ন প্রকার সার্কিট এবং কনভার্টার ব্যবহার করা হয়। আমরা জানি যে মাইক্রোকম্পিউটার একটি ডিজিটাল ডিভাইস। যার ফলে এর অভ্যন্তরীণ সকল কার্যক্রম ডিজিটাল সিগনালের মাধ্যমেই সংঘটিত হয়। কিন্তু, যেহেতু এনালগ ডিভাইসসমূহ এনালগ সিগনাল উৎপন্ন করে সেহেতু এনালগ ডিভাইসসমূহ মাইক্রোকম্পিউটারের সাথে ডাটা আদান-প্রদান করার জন্য এনালগ টু ডিজিটাল কনভার্টার ডিভাইস ইন্টারফেসিং ইউনিট হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

ডিজিটাল ও এনালগ ইন্টারফেসিং প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য বিভিন্ন ধরনের উপায় অবলম্বন করা হয়। সেসব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত পরবর্তিতে আলোচনা করা হবে।