ঘরে বসে জন্ম নিবন্ধন সনদের জন্য আবেদন করার নিয়ম
একটা সময় ছিল যখন জন্ম নিবন্ধন সনদ করার জন্য অনেক কষ্ট করতে হতো। অনেক জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করে একটি জন্ম নিবন্ধন সনদের জন্য আবেদন করতে হতো। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে দিন দিন ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হচ্ছে। তাই এ সকল কাজ আপনারা খুব সহজেই অনলাইনে করে ফেলতে পারবেন। তাই আজকে আমি আপনাদের দেখাব কিভাবে ঘরে বসে যে কারো জন্ম নিবন্ধন সনদের জন্য আবেদন করবেন। প্রাথমিকভাবে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করার জন্য আপনাদের একটি স্মার্টফোন অথবা ডেক্সটপ কম্পিউটার থাকতে হবে।
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করতে হলে যে সকল ডকুমেন্ট থাকতে হবেঃ
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করার ক্ষেত্রে বয়স ভেদে ডকুমেন্টের ধরনের পার্থক্য থাকতে পারে। নিচে বয়সসীমা সহ ডকুমেন্টের ধরনগুলো দেওয়া হল।
শুন্য থেকে ৪৫ দিন বয়সী শিশুর জন্ম নিবন্ধনের জন্য যে সকল ডকুমেন্ট থাকতে হবেঃ
- চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র বা চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান প্রদত্ত জন্ম সংক্রান্ত সনদের সত্যায়িত কপি বা পূরণকৃ্ত আবেদনপত্রে বার্থ এটেন্ডের এর প্রত্যায়ন বা ইপিআই কার্ডের সত্যায়িত অনুলিপি।
- পিতা / মাতা/ পিতামহ / পিতামহীর দ্বারা স্বনামে স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ঘোষিত আবাস স্থলের বিপরীতে হালনাগাদ কর পরিশোধের প্রমানপত্র বা পিতা / মাতা/ পিতামহ / পিতামহীর জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট ঘোষিত স্থায়ী ঠিকানা বা জমি অথবা বাড়ি ক্রয়ের দলিল , খাজনা ও কর পরিশোধ রশিদ। (নদীভাঙ্গন অন্য কোন কারনে স্থায়ী ঠিকানা বিলুপ্ত হলে)
- পিতা-মাতার অনলাইন জন্মনিবন্ধনসহ জাতীয় পরিচয়পত্র।
- আবেদনকারী/অভিভাবকের মোবাইল নম্বর।
৪৬ দিন থেক ৫ বছর বয়সী শিশুর জন্ম নিবন্ধনের জন্য যে সকল ডকুমেন্ট থাকতে হবেঃ
- টিকার কার্ড/স্বাস্থ্যকর্মী প্রত্যয়নপত্র স্বাক্ষর ও সিলসহ প্যাডে হতে হবে।
- পিতা-মাতার অনলাইন জন্মনিবন্ধনসহ জাতীয় পরিচয়পত্র।
- প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের প্রত্যয়নসহ বিদ্যালয়ের প্রত্যয়নের সব প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট লাগবে।
- বাসার হোল্ডিং নম্বর ও চৌকিদারী ট্যাক্সের রশিদের হাল সনদ।
- আবেদনকারী/অভিভাবকের মোবাইল নম্বর।
- ফরমের সঙ্গে এক কপি রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
বয়স ৫ বছরের বেশি হলে জন্ম নিবন্ধনের জন্য যে সকল ডকুমেন্ট থাকতে হবেঃ
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র (পিএসসি/জেএসসি/এসএসসি) শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র না থাকলে সরকারি হাসপাতালের এমবিবিএস ডাক্তারের স্বাক্ষর ও সিলসহ প্রত্যয়ন সনদ এবং জন্ম নিবন্ধন আবেদন ফরমের ৭ এর ১ নং কলামের স্বাক্ষর ও সিল বাধ্যতামূলক।
- যাদের জন্ম ২০০১ সালের ১ জানুয়ারির পর তাদের ক্ষেত্রে পিতা-মাতার অনলাইন জন্মনিবন্ধনসহ জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক।
- যাদের জন্ম ২০০১ সালের ১ জানুয়ারির আগে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক।
- যদি জন্ম ২০০১ সালের আগে হয় সেক্ষেত্রে পিতা-মাতা মৃত হলে মৃত্যু সনদ বাধ্যতামূলক।
- যাদের জন্ম ২০০১ সালের ১ জানুয়ারির পর তাদের পিতা-মাতা মৃত হলে প্রথমে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন গ্রহণ করার পর অনলাইন মৃত্যু নিবন্ধন সনদ গ্রহণ করতে হবে। উভয় সনদ আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে।
- বাসার হোল্ডিং নম্বর ও চৌকিদারী ট্যাক্সের রশিদের হাল সন।
- আবেদনকারী/অভিভাবকের মোবাইল নম্বর।
- ফরমের সঙ্গে এক কপি রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- আবেদনের সঙ্গে কাগজপত্র সরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য/নারী সদস্যদের স্বাক্ষরসহ সিল বাধ্যতামূলক।
তো শর্ত অনুযায়ী বুঝা গেলো যে, যে কারো জন্ম নিবন্ধন করতে গেলে তার মা-বাবা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন এর এর নাম্বার লাগবে। যদি মা-বাবার অনলাইন জন্ম নিবন্ধন করা না থাকে তো আগে তাদের জন্ম নিবন্ধন করাতে হবে তার পর নিজের জন্ম নিবন্ধন করতে হবে আর যদি মা-বাবা মৃত হয় তো তাদের মৃত্যু সনদ লাগবে।
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সনদের জন্য আবেদন করার নিয়মঃ
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সনদের জন্য আবেদন করার জন্য প্রথমে এই লিংকে (https://bdris.gov.bd/br/application) প্রবেশ করুন। এবার উক্ত পৃষ্ঠার সবগুলো লেখা ভাল করে পড়ে নিন। নাহলে পরবর্তীতে কোনো ভুল হলে ঝামেলায় পড়তে হবে। শুরুতেই জন্মনিবন্ধন সনদটি আপনি কোন ঠিকানার অফিস থেকে সংগ্রহ করতে চান তা সিলেক্ট করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি আপনার সুবিধামত স্থান নির্বাচন করুন। স্থান নির্বাচন করার পর পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন।
এবার নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির পরিচিতি এবং জন্মস্থানের ঠিকানা লিখার জন্য কতগুলো টেক্সট বক্স দেখতে পাবেন। এই ফরমটি সম্পূর্ণভাবে ফিলাপ করে পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন।
এবার আবেদনকারীর তথ্য ইনপুট দিতে হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে পিতা এবং মাতার জন্ম নিবন্ধন সনদের নাম্বারই শুধু ম্যানুয়ালি ইনপুট দেওয়া যাবে। পিতা ও মাতার জন্ম নিবন্ধন সনদের নাম্বার ইনপুট দিলে তাদের নাম এবং জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম্বার অটোমেটিকেলি চলে আসবে। এখানে চাইলেও পিতা ও মাতার তথ্য পরিবর্তন করে দেওয়া যাবে না। তাই আবেদনকারীর পিতা বা মাতার কোন তথ্যের মধ্যে কোন ভুল থেকে থাকলে তা জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করার পূর্বেই সঠিক করে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে। তা না হলে পরবর্তীতে আবেদনকারীর এবং আবেদনকারীর পিতা বা মাতা (অর্থাৎ যার তথ্যের মধ্যে ভুল রয়েছে) উভয়েরই জন্ম নিবন্ধন সনদ সংশোধন করতে হবে।
এবার আবেদনকারীর জন্মস্থান, স্থায়ী ঠিকানা এবং বর্তমান ঠিকানা ইনপুট দিতে হবে। জন্মস্থান এর ঠিকানা এবং স্থায়ী ঠিকানা একই হলে চেকবক্সটি টিক দিয়ে দিন। একইভাবে স্থায়ী ঠিকানা বর্তমান ঠিকানা একই হলে পরবর্তী চেকবক্সটিও টিক দিয়ে দিন।
ঠিকানা দেওয়া শেষ হলে আবেদনকারীর প্রত্যয়ন ইনপুট দিতে হবে। অর্থাৎ, আবেদনটি কে করছে সে সম্পর্কে কিছু তথ্য দিতে হবে। এক্ষেত্রে আবেদনকারীর বয়স যদি ১৮ এর উপরে হয় তাহলে সে নিজেই আবেদন করতে পারবে। কিন্তু, ১৮ এর নিচে হলে আবেদনকারীর পিতা বা মাতা অথবা আইনত বৈধ কোন অভিভাবক আবেদনটি করবে। তারপর আবেদনকারীর মোবাইল নাম্বারটি ইনপুট দিতে হবে এবং বয়স অনুযায়ী আবেদনকারীর যেসকল ডকুমেন্টের প্রয়োজন সে সকল ডকুমেন্ট আপলোড করতে হবে। ডকুমেন্টের সাইজ হতে হবে সর্বোচ্চ ১০০ কিলোবাইট। এই পৃষ্ঠার সকল তথ্য দেওয়া শেষ হলে পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন।
এবার আপনি এতক্ষণ যে তথ্যগুলো ইনপুট করলেন সে সকল তথ্য গুলো একসাথে একটি পৃষ্ঠায় দেখতে পাবেন। তথ্যগুলো ভালোভাবে মন দিয়ে দেখবেন। কোন ভুল পরিলক্ষিত হলে পূর্ববর্তী বাটনে ক্লিক করে সংশোধন করে নিতে পারবেন। যদি কোন ভুল না থাকে তাহলে সাবমিট বাটনে ক্লিক করুন। সাবমিট বাটনে করার সাথে সাথেই জন্ম নিবন্ধন সনদের আবেদন টি সাবমিট হয়ে যাবে এবং আপনাকে একটি আবেদন পত্রের নাম্বার দেওয়া। এই নাম্বারটি সংরক্ষণ করে রাখুন। পরবর্তীতে আবেদনপত্রের অবস্থা জানার জন্য এই নাম্বারটির প্রয়োজন হবে। এবার আবেদনপত্র প্রিন্ট করুন বাটনে ক্লিক করে আবেদনপত্রটি ডাউনলোড করে নিন।এবার ডাউনলোড করা আবেদনপত্রটি প্রিন্ট করতে হবে। এবার আবেদনপত্রটি এবং এর সাথে প্রয়োজনীয় সকল ডকুমেন্ট নিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে আবেদনপত্রটি আপনার নিবন্ধকের কার্যালয়ে পৌঁছে দিতে হবে। তারা প্রয়োজনীয় ফি রেখে আপনাকে জানিয়ে দিবে যে কখন আপনি জন্ম নিবন্ধন সনদটি নিতে পারবেন। ১৫ দিনের মধ্যে আবেদনপত্রটি জমা না দিলে আপনার আবেদনটি বাতিল হয়ে যাবে।
আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন যে কিভাবে ঘরে বসে অনলাইনে কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনের সাহায্যে যে কারো জন্ম নিবন্ধন সনদের জন্য আবেদন করবেন। আমাদের আজকে টপিকটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অন্যদের সাথে শেয়ার করে জানার সুযোগ করে দিন। এরকম আরো গুরুত্বপূর্ণ টপিক পাওয়ার জন্য আমাদের ব্লগটি নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন।